নিজস্ব প্রতিবেদক::
উখিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসটি ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এ অফিসে সরকারি কোন বিধান মানা হয় না। ইচ্ছেমতো দলিল রেজিস্ট্রি ফি আদায় করা হয়। দানপত্র বা হেবা দলিল রেজিষ্ট্রি করতেও অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয়। সাব-রেজিস্ট্রার,পিয়ন,অফিস সহকারি ও মোহরার আদায়কৃত টাকা ভাগবাটোরা করে নেন।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বিধান অনুযায়ী আমমোক্তার দলিলে সরকার নির্ধারিত মোট ৫৪০ টাকা নেয়ার কথা থাকলেও ইচ্ছেমত টাকা আদায় করা হচ্ছে। দলিলের সই মোহর কপি পাতা প্রতি জেএ ১৫টাকা করে জেপি ১৬ টাকা, জিজি ২৪ টাকা করে মোট নকলের উপর ১হাজার ২শ টাকা নেয়ার কথা থাকলেও নেয়া হয় ১হাজার ৫শ থেকে ২ হাজার টাকা। এ ছাড়াও একটি দলিলের নকল কপিতে সাবরেজিস্ট্রার নেন ২৫০ টাকা করে। এর ফলে দলিল দাতা ও গ্রহিতা উভয়ই আর্থিক ক্ষতিসহ হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
উখিয়া উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রার চিং মং থোয়াই সপ্তাহে তিন দিন অফিস করেন মাত্র কয়েকঘন্টা। কক্সবাজার থেকে রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে সকাল ১১ টার দিকে উখিয়া আসেন, আবার রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে দুপুর দুইটার দিকে কক্সবাজার চলে যান। রবিবার ও বৃহস্পতিবারে তিনি কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন না। ওই সময় তিনি কক্সবাজারের ভাড়া বাসায় তার পরিবারের সাথে সময় কাটান বলে অভিযোগ পাওয়া যায়৷
অভিযোগ রয়েছে, দলিল রেজিস্ট্রির সময় অফিস সহকারি ধনরঞ্জন, মোহরার রবি উল্লাহ ও পিয়ন লুৎফুর রহমানের মাধ্যমে সাব-রেজিস্ট্রার অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন। এছাড়াও সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের অধিকাংশ কর্মচারীরা নিয়মানুযায়ি অফিসের কাজ করেন না। তারা নকল নবীশ দিয়ে অফিসের কাজ করান। অথচ নকল নবীশরা সরকারি লোক নয়।
সম্প্রতি উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক হক চৌধুরী ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন, যাতে তিনি উখিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপারে লিখেছেন।
এখানে সাবেক চেয়ারম্যানের দেওয়া স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো..
উখিয়া সব- রেজিষ্টার সাহেবের অফিস শুধু সরকারি অফিস নয় বরং একটি দূর্নীতির আকড়া। আজ আমি নিজের কাজে সেখানে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম একটি দলিলের নকল কপি নিতে সরকারি খরচ কত? কর্মকর্তার সামনেই অধনস্থ একজন উত্তর দিলেন ৭০০ টাকা। সেখানে শতাধিক সাধারণ মানুষ বললেন তাদের নিকট থেকে ১৫০০/২০০০/২৫০০ করে নেওয়া হয়। অফিসার সাহেবের সামনেই পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম সরকারি ফিস জমা দেওয়ার পর অবিকল কপি পেতে কতদিন লাগে? উত্তরে অফিস জানালেন ৭/৮ দিন বাহিরে অবস্থানরত লোকজন জানালেন ১৫০০ টাকা দিলে ২ মাস, ২০০০ টাকা দিলে ১ মাস ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা দিলে ৭ দিনের মধ্যে পাওয়া যায়। সাব- রেজিষ্ট্রার সাহেব থাকেন কক্সবাজার শহরের দামী ভাড়া বাসায় ( সম্ভবত বেতনের সবটুকু টাকার সমান ব্যয়ে) সপ্তাহে সোম,মঙল, বুধবারে তিনি রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে অফিসে যাওয়া আসা করেন ( দৈনিক গাড়ি ভাড়া কমপক্ষে ১০০০টাকা)। রোববার ও বৃহস্পতিবারে তিনি অফিসে জাননা। তাই অপেক্ষমান মানুষের ভোগান্তির শেষ নাই — রেজিষ্ট্রেশনের সরকারি ফিসের অতিরিক্ত ১% ২% কোন কোন ক্ষেত্রে আরো বেশী ছাড়া রেজী করন হয় না। তাহার মূল যোগান দ্বাতা সহযোগী হলেন – মোহরার – রবিউল্লা — আমরা এজন্যই কি দেশটা স্বাধীন করেছিলাম? — আমি জনগণের পক্ষ হইতে দুদকের নিকট তদন্তের দাবী জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে খোঁজখবর নিতে সোমবার (৬ জুন) সকাল ১১ টার দিকে সরেজমিনে উখিয়া উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে গিয়ে সাব-রেজিস্ট্রারের সাথে কথা বলতে চাইলেও অফিস সহকারী ধনুরঞ্জন ও মোহরার রবি উল্লার কারনে কথা বলা যায়নি। তারা দুজনেই সাব রেজিস্ট্রারের হয়ে কাজ করেন। উখিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের যাবতীয় অনিয়ম-দুর্নীতি জায়েজ করেন মিলেমিশে । সাব-রেজিস্ট্রি অফিসারের নাম্বার চাইলেও পাওয়া যায়নি।
পাঠকের মতামত: